মুক্তির দাবিতে খুলনা জেলা কারাগারে অনশনরত খুবির দু’শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। গত একসপ্তাহ ধরে কারা হাসপাতালে রেখেই স্যালাইনের মাধ্যমে তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দু’শিক্ষার্থীর দাবি, বিগত সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির কারণে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। খুলনায় এমন দু’টি মামলায় তাদের ৩০ বছরের সাজাও হয়েছে। এছাড়া খুলনা ও ময়মনসিংহ জেলায় আরও ৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
খুলনা জেলা কারাগারের অনশনরত ওই দু’শিক্ষার্থী হলেন, নুর মোহাম্মাদ অনীক ও মোজাহিদুল ইসলাম। তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত-উল মুজাহেদীনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়।
খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো: নাসির উদ্দিন তাদের অনশনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তারা দু’জন আদালতের মাধ্যমে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর খুলনা জেলা কারাগারে আসেন। তাদের দু’জনকে সোনাডাঙ্গা থানার বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় ২০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও একই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। অপরদিকে সোনাডাঙ্গা থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে তাদের দু’জনের ১০ বছরের সাজা হয়েছে। এছাড়া খুলনার খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এবং ময়মনসিংহ জেলায় তাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা রয়েছে, যেগুলো আদালতে বিচারাধীন।
তিনি আরও জানান, এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তারা একবার অনশন করেছিল। সেবার তাদের অনশনের স্থায়ীত্ব ছিল ৩ দিন। এবার তারা ১০ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত তাদের অনশন ভাঙ্গেনি। তাদের অবস্থা অবনতি হওয়ায় কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্যালাইনের মাধ্যমে তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নুর মোহাম্মদের সাথে পরিবারের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারকে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অনশনের কারণ জানতে চাইলে সুপার মো: নাসির উদ্দিন বলেন, সাজাপ্রাপ্ত ওই দু’জন তাকে জানিয়েছেন যে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ ১৭ দিন বগুড়া ডিবি হেফাজতে নিয়ে গুম করে নির্যাতন করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলার কারণে এ প্রহসনের মামলার শিকার হয়েছেন। তারা এখন মুক্তি চান। মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ওই দুই বন্দী বলছেন যে-বিগত ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও তারা কারাগারে এখনও আটক থাকায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং সাজাভোগ করছেন। তাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ পূর্বক কারাগার থেকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা না করা পযন্ত কারাগারে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রথমবার অনশনের হুমকি দিয়ে সরকারি খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।
নাসির উদ্দিন জানান, ওই সময়ে তাদের আগ্রহ অনুযায়ী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করিয়ে স্বাভাবিক করানো হয়। কারাগার থেকে এখনও মুক্তি না পাওয়ায় তারা একই দাবি তুলে ১০ নভেম্বর থেকে থেকে পুনরায় সরকারি খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছেন।
কারাবিধি অনুযায়ী তাদেরকে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। কারা হাসপাতালেরত সহকারী সার্জনের মাধ্যমে তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হচ্ছে এবং ১২ ও ১৩ নভেম্বর তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় তাদেরকে আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সরকারি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম